করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেশন জট এড়াতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু বিভাগ শুরু করেছে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম। এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন? এ ব্যাপারে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হয়। সেখানে মোট ১৪২ শিক্ষার্থী মতামত প্রদান করেন।
তাতে দেখা যায়, চলমান পরিস্থিতিতে শতকরা ৯২ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। পাঁচ ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন অনলাইনে ক্লাসের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কোর্স শিক্ষক কর্তৃক নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিডিও তৈরী করে সেটি শিক্ষার্থীদের কাছে সরবারহ করা উচিত। তবে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস চালু হওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
অনলাইনে ক্লাস করার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মদিনা আক্তার বলেন, ‘আমার নিজের স্মার্ট ফোন নেই তারপরও যদি কোনোভাবে অন্যেরটা ম্যানেজ করতে পারি তাতেও ক্লাস করা প্রায় অসম্ভব কারণ বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত দূর্বল’।
ইংরেজি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা তামান্না রিমি বলেন, ‘এমনিতেই ক্লাসের লেকচার অনেক সময় বুঝে উঠতে পারিনা; সেখানে অনলাইনে ক্লাস করে কতটুকু বুঝতে পারবো?।
ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী শেখ সাইফ বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই সব সময় অাতঙ্কের মধ্যে থাকি। ফলে লেখাপড়ায় কোনোভাবেই মনযোগ দিতে পারিনা।’
অন্যদিকে ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক বলেন, ‘গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ দূর্বল হওয়ায় অনলাইনে ক্লাস করা কঠিন। সেক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ভিডিও তৈরী করে দেন তাহলে আমাদের সেটা ডাউনলোড করে দেখতে সুবিধা হবে’।
তবে এগ্রোটেকনলজি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম মনে করেন, ‘সারা দিন বাসায় বসে বসে না থাকার চেয়ে সেশনজট এড়াতে এবং পরবর্তী একাডেমিক চাপ কমাতে সীমিত পরিসরে হলেও অনলাইনে ক্লাস চালু হওয়া শ্রেয়।’
নিজ উদ্যোগে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ এনামুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের সম্ভাব্য ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যেই অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছি। প্রথম দিকে ক্লাসে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ থাকলেও আস্তে আস্তে সে সংখ্যাটা বাড়ছে। এজন্য আগামীতেও আমার এ ক্লস কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
এ ব্যাপারে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর শরীফ হাসান লিমন বলেন, ‘শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য দেশকে ভালো রাখা, নিজেকে ভালো রাখা। কিন্তু বর্তমানে এর কোনোটাই ভালো পরিস্থিতিতে নেই। সুতরাং এখন অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা’।
তবে খুবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর খাঁন গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে যাতে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক খোঁজ-খবর রাখতে পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নতুন সিদ্ধান্ত নিবো’।