করোনা ভাইরাস যেন এক আতংকের নাম। মৃত্যুর মিছিল যেন বেড়েই চলছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেলের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন।
ডাঃ মঈন উদ্দীন ছিলেন সিলেটে গরিবের ডা. হিসেবে পরিচিত । তার মৃত্যুর পর পুরো সিলেট জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মঈনের মৃত্যুতে দুইদিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের আবেগঘন ভাষায় স্ট্যাটাস দিয়ে মইনকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
ডা. মঈনের মৃত্যুর পরেই সরকারি বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে এসেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার চিকিৎসার প্রক্রিয়া নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন জন্ম হয়েছে। ডা. মইন কোনো সাধারণ চিকিৎসক ছিলেন না। উনি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের একজন সহকারি অধ্যাপক ছিলেন। অথচ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়নি। ওনি ডাক্তার হয়ে যদি সঠিক চিকিৎসা না পায় তাহলে সাধারণ মানুষ কি পাচ্ছে?
ডা. মঈন করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পিপিই ব্যবস্থা না করাই মূলত তিনি আক্রান্ত হন। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যথাযথ সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়নি। আক্রান্ত হওয়ার পর উপরের অনুমতি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে তাকে নিজ কর্মস্থল ওসমানী মেডিকেল কলেজেও রাখা হয়নি।
তারপর তাকে ঠেলে দেয়া হয় শামছুদ্দিন হাসপাতালে। সেখানে দুইটি ভেন্টিলেটর রাখা আছে সেটা চালানোর মতো লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরে জানতে পারলাম ভেন্টিলেটর নামক মেশিন দুইটা আসলে নষ্ট।
এরপর যখন ডা. মঈনের কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ওসমানী মেডিকেলের ভেন্টিলেটর চাওয়া হলো তখন বলা হয়েছে, ওসমানী মেডিকেলের আইসিও এইচডিওতে রাখা যাবেনা, যেহেতু ভেন্টিলেটরের নেগেটিভ প্রেশার সিস্টেম নাই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি পাননি নিজের প্রতিষ্ঠানের আইসিইউ, পাননি সরকারের অ্যাম্বুলেন্স।
সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১২০ বেডের আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। গত ৪ মার্চ থেকে চালু হয়েছে এ আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম। এর বাইরে শাহী ঈদগাহ সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এবং খাদিমনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয় মাসখানেক আগে।
শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড কয়েকদিন আগে প্রস্তুত করা হয়। তবে হাসপাতালের মধ্যে সন্দেহজনক রোগীদেরকে যে কক্ষে রাখা হয় (আইসোলেশন ইউনিট) তা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এখানে ভেন্টিলেন্টর থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন, সেন্ট্রাল এয়ারকুলারসহ কিছু সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। আইসিইউ’র শর্ত পূরণের জন্যে এসব সুবিধা অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া আইসিইউ পরিচালনার জন্যে শামসুদ্দিন হাসপাতালে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের মতো লোকবল নেই।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত চিকিৎসক মঈন উদ্দিনকে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক। কিন্তু সবক’টি আইসিইউ বেড রোগীতে পরিপূর্ণ। তাছাড়া হাসপাতালে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমন বাস্তবতায় ওই চিকিৎসককে সেখানে স্থানান্তর করা যায়নি।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিংবা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের আবেদন জানায় তার পরিবার। কিন্তু ওসমানী থেকে তাকে কোনো সহায়তা পায়নি।
আমি মনে করি ডা. মঈনের মৃত্যুর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। ডা. মঈনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে সরাসরি চিকিৎসা ব্যবস্থাই জড়িত। কারণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মইনের জন্য এয়ার এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেনি।
অব্যবস্থাপনা ও খামখেয়ালিপনায় ডাঃ মঈনের মৃত্যুর জন্য দায়ী। করোনার পূর্বপ্রস্তুতির সময় থাকলেও তারা গ্রহণ করেনি। এমনকি এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল গুলোতেও নেই চিকিৎসার সরঞ্জাম। দেশের এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষ যখন অনিরাপদ তখন অন্য রাষ্ট্রের সহয়োতায় ব্যস্ত আমাদের দেশ।
মোঃ জিশান আহমেদ সরকার
প্রভাষক, ছিলারচর বালিকান্দি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ডিগ্রী কলেজ, মাদারীপুর।
ইমেইল: biroh.1986@gmail.com