রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর এলাকায় বিয়ের চারমাস পূরন না হতেই শিরিনা খাতুন (২২) নামে নববধুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ই মার্চ) সকাল এগারটার দিকে শহরের ভবানীপুর শামীম মঞ্জিলে এ ঘটনা ঘটে। বেলা আড়াইটার দিকে ঐ গৃহ বধুর লাশ উদ্ধার করে রাজবাড়ী থানা পুলিশ। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ।
এ ঘটনায় নিহত শিরিনার স্বামী শামীম আহসান (৩০) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে থানা পুলিশ । পাশাপাশি শামীমের পিতা রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসর প্রাপ্ত একাউন্স হেড ক্লার্ক মোঃ ইশাক মিয়াকে ও তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিলেও রাতে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এলাকাবাসীর মনে!
পরদিন ১৪ই মার্চ নিহত শিরিনার ভাই শাহিনুর বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে । মামলা নং- ১৮( ১৪-০৩-২০) ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড । এ মামলায় ১ নং আসামী করা হয় নিহত শিরিনার স্বামী মোঃ শামীম আহম্মদ , ২ নং আসামী শামীমের বোনের ছেলে সাকিব হাসান তুলক ৩ নং ছেলের বাবা ইশাক মিয়া, ৪ নং আসামী ছেলের মা জাবেদা বেগম ।
এর পর ই শামিমের পিতা ইসহাক ও মাতা জাবেদাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানান সদর থানার ওসি (তদন্ত ) মোঃ আমিনুল ইসলাম। তবে পোষ্ট মরটেম রিপোর্ট ও মামলা পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে তিনি কিছুই বলেননি। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান। সমস্ত তথ্য হাতে পেলে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান ঐ কর্মকর্তা ।
এর আগে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নিহত শিরানা শামীম মঞ্জিলে ভাড়া থেকে লেখা পড়া করতো। সে রাজবাড়ী সরকারী কলেজ থেকে এবার অনার্স পরীক্ষা দিয়েছে।
ভাড়া বাসা থেকেই উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের সৃষ্টি হলে পারিবারিক ভাবে গত ১৫ই নভেম্বর-১৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তাদের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয়।
শামিমের দুলাভাই মোঃ মোতালেব জানান, শামীম জানতে পারে তার স্ত্রীর অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো। এ নিয়ে কয়েকবার পারিবারিক ভাবে বসা হয়। সেই ছেলেটি নিহত শিরিনের মোবাইলে মেসেজ দিতো। এ নিয়ে অশান্তির সুত্রপাত হলে গত ১২ই মার্চ শামীম তার শাশুড়ীকে তাদের বাড়ী আস্তে বলেন। তার মেয়ের এ সকল কথা তার শাশুড়ীকে জানান এবং তার শাশুড়ি মেয়েকে বুঝিয়ে পরদিন সকালে গ্রামের বাড়ী পাংশা আশুর হাট এলাকায় চলে যায়।
এদিকে শামিমের মা জানান, আমার ছেলে বসন্তপুরে তার নানীর মৃত্যু বার্ষিকীতে গিয়েছিলো সকালে। আমরা বাড়ীতে স্বামী স্ত্রী ও ছেলের বৌ ছাড়া আর কেউ ছিলাম না । সকাল সাড়ে দশ টার দিকে আমার ছেলের বৌকে ওযু করতে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করি এখন কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়বে ? সে কোন জবাব না দিয়েই ঘড়ে ঢুকে আমি আমাদের রুমে চলে আসি। পরে অনেকক্ষন তার কোণ সাড়া শব্দ না পেয়ে রুমের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে দেখি ছেলের বৌ নিজের ওড়না গলায় পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলছে।
ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারনা করা হলেও মেনে নিতে পারেনি থানা পুলিশ। কারন আত্মহত্যা করলে নিহত ব্যাক্তির লক্ষনের সাথে এ লাশের অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিহত শিরিনার গলায় রয়েছে দুটি দাগ, একটি ক্ষত চিহ্ন আর বাম চোখের উপর কালো দাগ। নিহত শিরিনা যে সিলিং ফ্যানে ঝুলে ছিলো সে ফ্যানে লেগে থাকা মাকড়সার জাল বিষয়টাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে তোলে। এটা কি আত্মহত্যা না কি অস্বাভাবিক মৃত্যু এ নিয়ে সন্দেহ থাকায় থানা পুলিশ শিরিনার লাশ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার জানান, লাশের কয়েকটি চিহ্ন দেখে বিষয়টি জটিল মনে হওয়ায় লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আমরা জানতে পারবো এটি কি হত্যা না আত্মহত্যা !